প্রকাশিত: Thu, Feb 16, 2023 11:10 AM
আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 2:06 AM

সত্য কথা বলা যে সমাজে নিষিদ্ধ, সেই সমাজ কখনো এগোয় না

জান্নাতুন নাঈম প্রীতি : ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনে সবচেয়ে বড়ো ভালোবাসা পেয়েছি বাংলা একাডেমির কাছ থেকে এবং তথাকথিত প্রগতিশীল নামের ভন্ডদের কাছ থেকে। বাংলা একাডেমি আমার বইটা বইমেলা থেকে ব্যান করেছে আর প্রগতিশীল নামের ভন্ডদের দাবি হলো, মার্কেজ, খুশবন্ত সিং আর প্রীতি এক না, প্রীতির সাহিত্য হয় না। এদ্দিন প্রীতির সাহিত্য ঠিকই হচ্ছিলো, কিন্তু যেই প্রীতি সাহিত্য সম্পাদকদের চরিত্রের পর্দায় হাত দিয়েছে, তখন সাহিত্য মনে হবে কেমনে? দ্বিতীয় হলো  প্রীতি প্রাইভেসি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। ভূতের মুখে রাম নাম না? 

পৃথিবীর সকল হুইসেলব্লোয়ারই দেশ সমাজ, মানুষ সবার ট্যাবুর প্রাইভেসি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। কারণ এই প্রাইভেসির কথা বলেই তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোতে দুর্নীতির কথা লিখলে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের দায়ে মামলা খাওয়া লাগে এবং একা একা আদালতে দাঁড়িয়ে মিথ্যাবাদীদের সাথে আপোস করা লাগে। তখন এই বদমায়েশি হালাল করা লোকগুলো আর থাকে না। একা একাই দাঁড়িয়ে তামাশা আর মিথ্যাচার করা ভাঁড়দের বিচার দেখতে হয় ওই প্রতিবাদী লেখককে। ইউরোপের আইন দেখানো একদল হতচ্ছাড়ার জানার দরকার ইউরোপে মিটু আন্দোলনের পরে কী পরিমাপ মেয়েদের এবিউজ করা লোকদের সামাজিক বয়কট শুরু হইছিলো। এই জিনিস সিরিয়াসলি দেশে শুরু হইলে প্রথমে ধরা খাবে এই লোকগুলোই। ফলে এরা মি-টু আন্দোলন নিয়ে বিশাল লেকচার দিলেও চুপ করে থাকবে অন্য বন্ধুদের ব্যাপারে, এমনকি নিজেদের ব্যাপারেও। কারণ তাহলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে। 

শেষ কথা, বইটার সাফল্য অর্জন ছিলো মূল সমস্যা। ফলে এই বইয়ের ওপর প্রত্যেকটা অখ্যাত এবং মিডিওকারের চোখ ছিলো যেকোনো ছুতোয় বইটাকে মেলার মাঠ থেকে সরানো লাগবেই। ফলে তারা সফল হলেও তারা নিজেরাও জানে তাদের সমগ্র তথাকথিত প্রগতিশীল নামের ভন্ড মিলে একটা বই লিখলেও প্রীতির বইটার সমান পাঠনক তারা পাবে না। প্রীতির প্রচুর অহংকার আর কনফিডেন্স। অথচ আত্মবিশ্বাস ছাড়া ভালো কিছু লেখা যায় না, অর্জনও করা যায় না। মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে লেখা লেখক কমই ছিলো, এখন দিনে দিনে সেটা একদম শূন্যে নেমে আসছে।  সত্য কথা বলা যে সমাজে নিষিদ্ধ, সেই সমাজ কখনো আগায় না। 

 বাংলা একাডেমি বলেছে, আমার বইয়ে তারা দেখেছে বিতর্কিত মন্তব্য আছে। বাংলা একাডেমি যা বলে নাই তা হচ্ছে- বইয়ে তাদের সেইসব লোকদের নাম আছে, কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি আছে, যাদের কথা মুখে নেওয়া তাদের জন্য মানা। বিতর্ক ছাড়া প্রগতি সম্ভব? যাই হোক, বইমেলা থেকে বইটা নিষিদ্ধ করলেও বইটা বাতিঘর, প্রথমা সবখানেই পাবেন। বইয়ের ইংরেজি অনুবাদও চলছে এবং সেই বই সারা দুনিয়ার মানুষ পড়বেও। এই বই নিয়ে আমি লেকচার দিবো বিবলিওটেক ক্যানপিতে। প্যারিসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এই ইভেন্ট নিয়ে বিস্তারিত আছে। লেখকের ওপর জবরদস্তি করে কখনো সমাজে প্রগতি আসেনি। ভবিষ্যতেও আসবেনা এবং আমি জানি, আমি জীবনে একটি বাক্য না লিখলেও ঞযরং নড়ড়শ রিষষ ংঃধু, ষড়হম ধহফ ভড়ৎবাবৎ. আমার বিপক্ষে যারা কলম ধরেছেন, চিন্তা করবেন না। আপনার হাত থেকে সেটা তারাই কেড়ে নেবে, যাদের আপনি ভয় পান এবং যেকারণে আপনারা প্রীতিকে ভয় পান! 

বাক স্বাধীনতার জয় হোকÑখড়হম ষরাব ঃযব ভৎববফড়স ড়ভ ংঢ়ববপয। লেখক: কথাসাহিত্যিক